বাচ্চাদের ঘন ঘন সর্দি হওয়া সাধারণ একটি বিষয়, বিশেষ করে যখন তারা স্কুল বা ডে-কেয়ারে যায়। কারণ তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এখনও পুরোপুরি বিকশিত হয়নি। তবে যদি সর্দি খুব ঘন ঘন হয় বা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে যায়, তখন কিছু বিষয়ে নজর দেওয়া দরকার।
বাচ্চাদের ঘন ঘন সর্দির ক্ষেত্রে করণীয়:
১. পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম
- বাচ্চাদের প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন। ঘুম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
২. পুষ্টিকর খাবার
- ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ খাবার (কমলা, আমলকি, লেবু) দিন।
- দুধ, ডিম, মাছ, সবজি ও ফলমূল খাওয়ানোর অভ্যাস গড়ুন।
৩. পর্যাপ্ত পানি পান
- শরীরে পানির ঘাটতি হলে রোগ প্রতিরোধ কমে যায়। গরম পানি খাওয়ানো ভালো, বিশেষ করে সর্দির সময়ে।
৪. বায়ুবাহিত রোগ থেকে রক্ষা
- ঠান্ডা বা ধুলাবালু থেকে দূরে রাখুন।
- প্রয়োজনে মাস্ক ব্যবহার করতে দিন (যদি সম্ভব হয়)।
৫. নাক পরিষ্কার রাখা
- বাচ্চার নাক বন্ধ থাকলে নরমাল স্যালাইন ড্রপ (নাকে দেয়ার স্যালাইন) ব্যবহার করতে পারেন।
৬. গার্গল বা ভ্যাপার ব্যবহার
- গরম পানির ভাপ নেওয়া সর্দি কমাতে সাহায্য করে (বয়স অনুযায়ী সাবধানতা মেনে)।
৭. ডাক্তার দেখানো
- যদি সর্দির সঙ্গে জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, কান ব্যথা, অথবা খাবারে অরুচি দেখা দেয়—তাহলে দ্রুত শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
- বারবার সর্দি হলে এলার্জি বা সাইনাসের সমস্যাও হতে পারে, সেটাও চেক করানো দরকার।
৮. ইমিউনিটি বাড়ানোর উপায়
- কিছু শিশুর ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক বা ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট দেওয়া যেতে পারে, তবে সেটা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।
নিচে বাচ্চাদের জন্য একটি সহজ ও কার্যকর ঘরোয়া টোটকা (হোম রেমেডি) দিলাম যা সর্দি উপশমে সাহায্য করে। তবে বয়স অনুযায়ী কিছুটা সতর্কতা মানতে হবে।
🧉 তুলসী-আদা-শুধু মধুর কাশির সিরাপ (১ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য)
উপকরণ:
- পানি – ১ কাপ
- তুলসী পাতা – ৫-৬টি
- আদা – ১ চা চামচ (কুচি করে কাটা)
- লবঙ্গ – ১টি
- দারুচিনি – ছোট এক টুকরো
- মধু – ১ চা চামচ (১ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য)
প্রস্তুত প্রণালি:
১. পানিতে সব উপকরণ দিয়ে ফুটাতে থাকুন যতক্ষণ না পানি অর্ধেকে নেমে আসে।
২. ঠান্ডা করে ছেঁকে নিন।
3. তাতে মধু মিশিয়ে দিন।
খাওয়ানোর নিয়ম:
- দিনে ২-৩ বার ১-২ চামচ করে খাওয়াতে পারেন (১ বছরের বেশি বাচ্চার জন্য)।
- খালি পেটে না খাওয়ানোই ভালো।
🧂 নাক বন্ধ বা সর্দির জন্য ঘরোয়া মলম (বাষ্প ঘষা):
উপকরণ:
- নারকেল তেল – ২ টেবিল চামচ
- ভেঙে গুঁড়া করা পুদিনা পাতা বা মেনথল – অল্প
- সামান্য কালোজিরা (ইচ্ছেমতো)
ব্যবহার:
তেল গরম করে সব উপকরণ দিয়ে সামান্য গরম করে ঠান্ডা হতে দিন। বাচ্চার বুকে, পিঠে, কপালে ও গলায় হালকা করে ঘষে দিন। এটা গন্ধে আরাম দেয় এবং নাক খুলে।
❗ সতর্কতা:
- ১ বছরের নিচে বাচ্চাকে কখনও মধু দেবেন না।
- প্রথমবার ব্যবহারের আগে একটু টেস্ট করে দেখুন অ্যালার্জি হয় কি না।
- যদি শ্বাসকষ্ট বা কাশি বেশি হয়, ঘরোয়া টোটকায় সময় নষ্ট না করে দ্রুত ডাক্তার দেখান।